oklahoma.JPG

Translated by Arunava Sinha

(Read in English, Hungarian, Polish and/or Spanish)

১. ভবিষ্যতে ঘটতে পারে এমন সব রকম বিপর্যয়ের জন্য ওদের মা ওদের প্রস্তুত করে


ভবিষ্যতে ঘটতে পারে এমন সব রকম বিপর্যয়ের জন্য ওদের মা ওদের প্রস্তুত করে। তাই ব্রেকফাস্টের সময়ে মা পড়ে শোনায় টালসা টাইমসের হেডলাইনগুলো, এমি আর জোই চিয়রিওস খেতে থাকে। দুটি মেয়েই চুপ করে থাকে মা পড়ার সময়, কিন্তু মন দিয়ে শোনেনা। ওরা খালি জানে যে সারাক্ষণই কোথাও না কোথাও সাঙ্ঘাতিক কিছু হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় ছাড়াও আছে ভূমিকম্প, বিমান দুর্ঘটনা, যুদ্ধ। এইডস মহামারীও চলছে, যদিও এমি বা জোই কেউই জানেনা এইডস জিনিসটা কী। ওরা শুধু জানে ওদের হাত ধুতে হবে।

চান করার সময় মা ওদের পড়ে শোনায় গুড হাউসকীপিং পত্রিকার নানা লেখা। মা কখনো শাওয়ারে চান করে না, কারণ একবার একটা সিনেমায় দেখেছিল প্রধান চরিত্র শাওয়ারের তলায় চান করতে করতে খুন হলো, চতুর্দিকে রক্ত। মার ভালো লাগে বাথটাবে চান করার সময়ে মেয়েরা কাছে থাকলে। 

মাঝেমাঝে মা আত্মীয়স্বজনের গল্প বলে। একটা গল্প সবাইকেই বলে সেটা হলো অন্ধ গলির ভেতর কয়েকটা বাড়ি দূরে যে বদ্ধপাগল প্রতিবেশী নিজের বাড়ির সবাইকে গুলি করে মেরে পেছনের উঠোনের বড়ো গাছটায় লুকিয়ে ছিল, তার কথা। বাবা তখন বাড়িতে নেই, স্টিলওয়টারে ওয়ার্কশপে ব্যস্ত। মা রাইফেলটা নিয়ে তৈরী হলো মেয়েদের বাঁচাতে গেলে যা করতে হবে করার জন্য। এমিকে খাটের তলায় ঢুকিয়ে দিয়ে বললো যাই হোক না কেন ওখানেই যেন থাকে আর একটাও শব্দ না করে। যাই হোক না কেন, এই কথাটা বার বার বলে, আর প্রত্যেকবার গল্পটা বলার সময়ে এই জায়গাটায় মার গলাটা ভারী হয়ে যায়।  

জোই তখনও খুব ছোট, তাই কোলে রাখতে হয়েছিল। কিন্তু ছোট্টো হলেও জোই বুঝতে পেরেছিলো কিছু একটা হচ্ছে, কারণ কিছুতেই কান্না থামাচ্ছিল না, আর সেটা থেকেই মনে পড়ে যায় সেইসব মায়েদের কথা যারা হলোকস্টের সময়ে নিজেদের বাচ্চাদের দম বন্ধ করে মেরে ফেলতে বাধ্য হয়েছিল যাতে ধরা না পড়ে যায়। 

এমি আর জোই জানে হলোকস্ট এমন একটা সময় যখন সব ইহুদীদের বিনা দোষে খুন করে জঙ্গলে একটা মস্ত বড়ো গর্তের মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছিল। 

জোই কাঁদছিল, মা তখন এক হাতে জোইকে কোলে নিয়ে আর অন্য হাতে বন্দুক ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। ততক্ষণে পুলিশ এসে লোকটাকে ঘিরে ফেলেছে। এটা ওরা টিভি দেখে বুঝতে পারছিলো কারণ যদিও ব্যাপারটা বাড়ির ঠিক পেছনেই হচ্ছিলো মা জানতো জানলা থেকে দূরে থাকতে হবে, হঠাৎ যদি গুলি ছুটে আসে? উন্মাদ প্রতিবেশী গুলি চালিয়েই যাচ্ছিলো, আরেকজন প্রতিবেশী যে পুলিশকে সাহায্য করতে এসেছিলো তাকেও গুলি করেছিল। 

প্রত্যেকবার গল্পটা বলার সময়ে এই অবধি এসে মা একটু থেমে চারিদিকে একবার দেখে নেয়।  

কিন্তু যে লোকটাকে গুলি করেছিল সে তামাক চিবোতো, সেই মুহূর্তে তামাকই চিবোচ্ছিলো। গুলিটা গালের ভেতর দিয়ে এরকম ভাবে ঢুকে—মা নিজের গালের দিকে দেখাতো মধ্যমাটাকে পিস্তল বানিয়ে —গলা অবধি না গিয়ে তামাকের ডেলার মধ্যে গেঁথে গেছিলো, আর লোকটাও বেঁচে গেছিলো।  

এই জায়গাটা সবার খুব ভালো লাগে, কিন্তু মেয়েরা কেউই বুঝতে পারেনা কেন, কারণ ওরা জানে তামাক মানুষ মারে, আর তাছাড়া ওই প্রতিবেশীকে ওরা সারাক্ষণ দেখে গাড়িবারান্দায় বসে একটা বড়ো টিনের বালতিতে কালো রসের মতো থুতু ফেলছে, একটা জীর্ণ কঙ্কাল, মুখে বিশ্রী একটা শুকোনো ঘা।  

কিন্তু এমির পুরো গল্পটাই খুব বাজে লাগে। খাটের তলায় একা থাকার ব্যাপারটা ও মনেই করতে পারেনা, যদিও এতবার শুনেছে যে ছবিটা পরিষ্কার দেখতে পায়, এতটাই পরিষ্কার যে মাঝেমাঝে এটা নিয়ে স্বপ্নও দেখে: জোই কাঁদতে কাঁদতে গোলগোল করে ঘুরছে, এমির নাগালের বাইরে। 

শেষ পর্যন্ত উন্মাদ প্রতিবেশী নিজেকেই গুলি করে মরে গেছিলো।